ব্রিটেনে ভোটে বাংলাদেশিদের বাজিমাত

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশিরা। গত বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে আটজন, কনজারভেটিভ পার্টি থেকে দুজনসহ অন্যান্য দলের মনোনয়নে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোট ৩৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যাচ্ছেন রুশনারা আলী, রূপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক ও আপসানা বেগম। যদিও ৩৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের মধ্যে চারজন ছাড়া আর কেউ জয়ী হতে পারেননি।

রুশনারা আলী : ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে পা রাখেন রুশনারা আলী। টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওই আসন থেকে তিনি টানা পাঁচবার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হলেন। তবে এবার বাউন্ডারি পরিবর্তন হওয়ায় তিনি বেথনালগ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে পাঁচবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে যাচ্ছেন।

সিলেটে জন্ম রুশনারা আলীর। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন তিনি। রুশনারা আলী ২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
টিউলিপ সিদ্দিক : বিপুল ভোটে জয়লাভ করে টানা চতুর্থবারের মতো ব্রিটেনের পার্লামেন্টে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক। দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২ ভোট।

বরাবরের মতো ব্রিটেনের রাজনীতিতে ও টিউলিপকে ঘিরে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আগ্রহ ব্যাপক রয়েছে। এবারের নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ফলাফল ঘোষণার পর জয়ের প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিক জানান, ‘সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের দোয়ায় আমি এ নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচিত হলাম। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাকে সব সময় সাহায্য ও সমর্থন করে আসছে। আমি খুবই কৃতজ্ঞ, এবারও ওনারা আমাকে সমর্থন করেছেন।’

২০১৫ সালে টিউলিপ সিদ্দিক প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। কনজারভেটিভ পার্টির একসময়ের নিরাপদ এই আসন লেবার পার্টিকে উপহার দিয়ে তিনি এখন আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসনে রূপান্তর করেছেন। ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া টিউলিপ ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এর মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার পথচলা শুরু। টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।

সফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল, হ্যাম্পস্টেডের রয়্যাল স্কুল ও মিল হিল স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি ও কিংস কলেজ লন্ডন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২০১১ সালে সরকার, রাজনীতি ও পলিসি বিষয়ে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

রূপা হক : টানা চতুর্থবারের মতো ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রূপা হক। এবারের নির্বাচনে ২২ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন রূপা হক। এরপর টানা তিনবার তিনি ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের পাবনা জেলার মুকসেদপুরে রূপা হকের পৈতৃক নিবাস। তার বাবা মোহাম্মদ হক ও মা রুশনারা হক ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। রূপা হক রাজনীতিতে আসার আগে শিক্ষক ও লেখক ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার ও ২০০৪ থেকে ইউনিভার্সিটি অব কিংস্টনে শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রূপা হক। তাকে সর্বদলীয় সংসদীয় মিউজিক গ্রুপের ভাইস চেয়ার এবং ক্রসরেলের সর্বদলীয় সংসদীয় পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

আপসানা বেগম : ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রথম হিজাব পরে আলোচনা তৈরি করা আপসানা বেগম দ্বিতীয়বারের মতো আবারও যাচ্ছেন পার্লামেন্টে। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টি প্রার্থী আপসানা বেগম দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন।

২০১৯ সালে আপসানা লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টে তিনিই প্রথম হিজাব পরিহিত সংসদ সদস্য। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভূমিকা পালন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি।

রাজনীতি বিষয়ে কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে স্নাতক এবং ২০১২ সালে সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও কমিউনিটি লিডারশিপ বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন তিনি।

আপসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। তার বাবা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর মনির উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights