জিন্নাহর বাঙালি বান্ধবী সরোজিনী

যদি প্রশ্ন করা হয় এ যাবৎকালের সেরা বাঙালি নারী রাজনীতিবিদ কে বা কারা? জবাবে প্রায় শতভাগ বাংলাভাষীর কাছে প্রাধান্য পাবে তিনটি নাম। তাঁরা হলেন বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা এবং মমতা ব্যানার্জি। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আগে মুসলিম বিশ্বের নারী রাজনীতিকদের মধ্যে একমাত্র বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী পদ অলংকৃত করেন পাকিস্তানে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। দুবার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কৃতিত্ব দেখালেও একবার ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র দেড় মাস। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কার্যত হয়ে ওঠে একতরফা। আমজনতার কাছেও ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে পাস হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা। তারপর সে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জোট সরকার। তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় এসেই তার ব্রেন চাইল্ড তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেন। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে থাকলেও তা গ্রাহ্য করেনি আওয়ামী লীগ। শেষ তিনটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার গরজ অনুভব করেননি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার সাত মাসও টেকেনি। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। তাঁর মন্ত্রী-এমপিদের কেউ পলাতক কিংবা কেউ জেলে।

শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের হাল ধরেন পরিবারতন্ত্রের বদৌলতে। দলের কোনো সাধারণ সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা এই যোগ্যতায় শেখ হাসিনা দলের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ভারত থেকে স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে দেশে ফেরেন। আর কুলবধূ বেগম খালেদা জিয়া স্বামী শহীদ জিয়ার গড়া দল বিএনপির চেয়ারপারসন হন কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই।

বাঙালি নারী রাজনীতিকদের মধ্যে আরেকটি মশহুর নাম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। আজকের মূল আলোচ্য বিষয় বহুল আলোচিত এ তিন নেত্রী নন। পাঠকদের দৃষ্টি ফেরাতে চাই বিক্রমপুর বা মুন্সীগঞ্জের এক নারী রাজনীতিকের দিকে। নাম তাঁর সরোজিনী নাইডু। শত বছর আগে ১৯২৫ সালে তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। সরোজিনী নাইডু ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একমাত্র মেয়ে বন্ধু। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বন্ধু-বান্ধব ছিল একেবারে সীমিত। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলেও নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। এমনই কাঠখোট্টা ছিলেন, তার সঙ্গে কারও সম্পর্ক সাধারণত বন্ধুত্ব পর্যন্ত গড়াত না। এদিক থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন সরোজিনী নাইডু। তিনি ছিলেন জিন্নাহর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রাজনৈতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টিতে সে প্রশংসা ইন্ধন জুগিয়েছে। জিন্নাহর ৪০ বছর বয়সে তাকে নিয়ে বই লেখেন সরোজিনী।
সরোজিনী ছিলেন হায়দরাবাদের নিজামের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. অঘোর নাথ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা। তার জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদ রাজ্যে। বেড়ে উঠেছেনও সেখানে। সরোজিনীর বাবা কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে বাস করলেও তাদের বাড়ি বাংলাদেশের বিক্রমপুরের ব্রাহ্মণগাঁওয়ে। অভিজাত এ বাঙালি পরিবারটির সবাই ছিল সুশিক্ষিত। সরোজিনীর মা বরোদা সুন্দরী দেবী ছিলেন তাঁর সময়ের খ্যাতিমান কবি। সরোজিনী মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৮৯১ সালে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। সেখানে প্রথমে কিংস কলেজ এবং পরে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির গির্টন কলেজে তিন বছর পড়াশোনা করেন। ১৮৯৮ সালে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর হায়দরাবাদের ড. মতিয়ালা গোবিন্দরাজলু নাইডুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সরোজিনী চট্টোপাধ্যায় হয়ে যান সরোজিনী নাইডু।

জিন্নাহর সঙ্গে সরোজিনী নাইডুর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে দুজনের অভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সূত্র ধরে। সরোজিনীর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের বিক্রমপুরে হলেও তাঁর জন্ম যেমন হায়দরাবাদে তেমন পড়াশোনাও করেছেন সেখানে। ঘরে বাংলা ভাষায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেও পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে। তেলেগু ও হিন্দি ভাষায় তাঁর দক্ষতা গড়ে উঠেছিল স্বাভাবিকভাবে। বিক্রমপুরের সন্তান ড. অঘোর নাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের ভাগ্য হায়দরাবাদ রাজ্যের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেও বাংলা তথা বাঙালিত্বের প্রতি তাদের দরদ ছিল অপরিসীম। ড. চট্টোপাধ্যায়ের বিদূষী কন্যা সরোজিনীও ছিলেন এ ক্ষেত্রে অভিন্ন। স্বভাবতই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়াকে তিনি কর্তব্য বলে ভাবেন। সরোজিনী ১৯০৫ সালে সরাসরি জড়িত হন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল কংগ্রেস। জিন্নাহ বিলাতে থাকতে কংগ্রেসের রাজনীতির প্রতি ঝোঁক অনুভব করতেন। কংগ্রেস নেতা দাদাভাই নওরোজীর ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করত। রাজনীতির প্রতি দুর্বলতা থাকলেও জিন্নাহ দেশে এসে আইন পেশায় জড়িত হয়ে পড়েন নিবিড়ভাবে। ভালো আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন তিনি। এ স্বপ্নের পেছনে সময় দেওয়ায় দেশে ফেরার কয়েক বছর পর্যন্ত জিন্নাহ রাজনীতির ব্যাপারে মাথা ঘামাননি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে যোগ দিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ওই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। শুরু হয় রাজনীতিক জিন্নাহর পথ চলা। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের ধারও ধারতেন না তিনি। সেহেতু সাধারণ যে কোনো ভারতীয় হিন্দু বা মুসলমানের চেয়ে জিন্নাহ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। এ যোগ্যতাটি কংগ্রেসের রাজনীতিতে জিন্নাহর প্রতিষ্ঠা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখে। সরোজিনী জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ। তার জন্ম উপমহাদেশের শীর্ষ স্থানীয় হিন্দু অভিজাত পরিবারে। তবে হায়দরাবাদের নিজামের শিক্ষা উপদেষ্টা বা শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মুসলিম অভিজাত পরিবারের সঙ্গে সরোজিনী পরিবারের ছিল ঘনিষ্ঠ মেলামেশা। যে কারণে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ওঠা সম্ভব হয়েছিল তাঁর পক্ষে। জিন্নাহ ছিলেন বয়সে সরোজিনীর চেয়ে ২৬ মাসের বড়। তবে এনট্রান্স বা ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার ক্ষেত্রে সরোজিনী ছিলেন এক বছরের সিনিয়র। অসামান্য মেধাবী সরোজিনী ১৮৯১ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। জিন্নাহ এনট্রান্স পাস করেন ১৮৯২ সালে ১৫ বছর বয়সে। জিন্নাহ এন্ট্রান্স পাস করে বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়তে যান ১৮৯২ সালে। সরোজিনী দেশে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলাতে যান ১৮৯৫ সালে।

জিন্নাহ ও সরোজিনীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে। বঙ্গভঙ্গের সঙ্গে দুজনের সরাসরি কোনো লাভক্ষতির সম্পর্ক ছিল না। এ ক্ষেত্রে সরোজিনীর ছিল কিছুটা ব্যক্তিগত আবেগ। তার বাবা-মা দুজনই বাঙালি। বাবা শিক্ষাবিদ এবং মা কবি। বঙ্গভঙ্গকে সম্ভবত তিনি দেখেছেন সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি হিসেবে। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ভারতবর্ষের সবচেয়ে রাজনৈতিক সচেতন জনগোষ্ঠী বাঙালিদের মধ্যে বিভক্তি আনার চেষ্টা করছে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী এমনটাই বিশ্বাস করতেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা। সরোজিনী ছিলেন তাদেরই একজন। বাংলা বিভক্তির পেছনে ব্রিটিশদের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করতেন জিন্নাহ। ভারতবাসীকে ভাগ এবং শাসন কর এই হীন নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি কংগ্রেস নেতা দাদাভাই নওরোজীর আহ্বানে ১৯০৫ সালে কংগ্রেসের কলকাতা কাউন্সিলে যোগ দেন। কংগ্রেসে জিন্নাহ এবং সরোজিনী নাইডুর পথ চলা শুরু হয় একই সময়ে। তবে জিন্নাহ সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হলেও সরোজিনী যুক্ত হন পরোক্ষভাবে। নারী মুক্তি ও শ্রমিক আন্দোলন ছিল তার কাজের ক্ষেত্র। তিনি সমগ্র ভারতে সভা-সমাবেশ করে নারী মুক্তি, শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে দেশবাসীকে জড়ো করার তৎপরতা চালান। সরোজিনী ১৯১৬ সালে বিহারে নীল চাষিদের অধিকারের দাবিতে প্রচারাভিযানে অংশ নেন। ১৯১৭ সালে নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে অ্যানি বেসান্তকে সভাপতি করে উইমেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে নাইডু ওই সংগঠনের সদস্য হন। ১৯১৯ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া হোম রুল ডেপুটেশনের সদস্য হিসেবে বিলাতে যান এবং ১৯২০ সালের জুলাই মাসে ভারতে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনে।

১৯২০ সালের ১ আগস্ট সরোজিনী নাইডু মহাত্মা গান্ধীর পক্ষে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয় কংগ্রেসে ভারত থেকে যে দুজন প্রতিনিধি অংশ নেন, সরোজিনী নাইডু তাঁদের একজন। ১৯২৫ সালে তিনি কানপুরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২৬ সালে অল ইন্ডিয়া উইমেন কনফারেন্স গঠিত হলে সরোজিনী সভানেত্রী নির্বাচিত হন এবং নারী শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

সরোজিনী নাইডু ১৯২৮ সালের অক্টোবরে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের বার্তা নিয়ে আমেরিকায় যান। সেখানে তিনি আফ্রিকান আমেরিকান এবং ভারতীয় আমেরিকানদের মধ্যকার বৈষম্যের প্রতিবাদ জানান। আন্দোলন-সংগ্রামে সরোজিনী নাইডু ছিলেন সামনের কাতারে। আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ১৯৩০ সালের মে মাসে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৩১ সালে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে নাইডু গান্ধীর নেতৃত্বে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। ১৯৩২ সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে গ্রেপ্তার হন। অসুস্থতার কারণে অবশ্য সরোজিনী নাইডুকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ভারত ছাড় আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে ২১ মাস আটক রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশিয়ান রিলেশন্স কনফারেন্সের স্টিয়ারিং কমিটিতে সভাপতিত্ব করেন সরোজিনী নাইডু। সরোজিনী নাইডু রাজনৈতিক সংগ্রামে জড়িত হয়ে ক্রমান্বয়ে আন্দোলনের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন। একই সময় তিনি দ্যুতি ছড়িয়েছেন কবি হিসেবে। সরোজিনী নাইডু ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা কবি। তার রচিত কবিতা সংকলন ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি সাধারণ্যে ‘বুলবুলে হিন্দ’ বা নাইটেঙ্গেল অব ইন্ডিয়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সরোজিনী নাইডু মানুষের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ১৯০৮ সালে হায়দরাবাদে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ সময় ত্রাণ তৎপরতায় তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। যে কারণে ব্রিটিশ সরকার সরোজিনী নাইডুকে ‘কায়সার ই হিন্দ’ স্বর্ণপদক প্রদান করে।

জিন্নাহর সঙ্গে সরোজিনীর নজরকাড়া বন্ধুত্ব ছিল। জিন্নাহ তার এক পারশিক বন্ধুর কিশোরী মেয়ের প্রেমে পড়েন এবং তাকে বিয়ে করেন। চারদিকের সমালোচনায় জিন্নাহ যখন কোণঠাসা তখনো সরোজিনী তাকে সমর্থন জুগিয়েছেন।

জিন্নাহ কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দেন। তারপরও সরোজিনীর সঙ্গে বন্ধুত্বে কখনো ফাটল ধরেনি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুই মেরুতে অবস্থান নিলেও তাদের মধ্যে বজায় ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দুজন একে অপরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। জিন্নাহ ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সে দেশের প্রথম গভর্নর জেনারেল। কংগ্রেসের রাজনীতিতে সরোজিনী নাইডুর অবস্থান ছিল একেবারে সামনের কাতারে। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহেরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো নেতাদের পাশে। স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সালেই ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের গভর্নর বা রাজ্যপাল নিযুক্ত হন সরোজিনী নাইডু। ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ এলাহাবাদে তিনি মারা যান। তার পাঁচ মাস আগে মারা যান বন্ধু জিন্নাহ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল থাকা অবস্থায়। সরোজিনী নাইডুর মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক। তবে জিন্নাহ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ হারান কি না তা নিয়ে প্রশ্ন কম নয়।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

ইমেইল : sumonpalit@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights