আল্লাহকে লজ্জা করা লজ্জাশীলতার সর্বোচ্চ স্তর

উম্মে আহমাদ ফারজানা
মানুষ নিজের শিক্ষক-গুরুজন, পিতা-মাতা, সমাজনেতা কিংবা সত্মানুষের সামনে গোনাহ করতে লজ্জা করে। কিন্তু আল্লাহকে প্রকৃত পক্ষে লজ্জা করে না। তাই মানুষ লোকচক্ষুর অন্তরালে পাপ করলেও সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ থেকে গোপন করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘তারা লোকদের থেকে লুকাতে চায়, কিন্তু আল্লাহ থেকে লুকাতে চায় না। তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন, যখন রাত্রিতে তারা (আল্লাহর) অপ্রিয় বাক্যে শলাপরামর্শ করে। বস্তুত আল্লাহ তাদের সব কৃতকর্মকে বেষ্টন করে আছেন।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৮)

অথচ আল্লাহ সব কিছু দেখেন। এ জন্য তাঁকে সর্বাধিক লজ্জা করা উচিত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে এমনভাবে লজ্জা করার, যেরূপ তুমি তোমার জাতির সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে লজ্জা করে থাকো।’ (সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ৭৪১; সহিহুল জামে, হাদিস : ২৫৪১)

মহানবী (সা.) আল্লাহকে লজ্জা করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহকে লজ্জা করো সত্যিকারের লজ্জা। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা অবশ্যই আল্লাহকে লজ্জা করি, আলহামদুলিল্লাহ।

তিনি বলেন, কথা সেটা নয়। বরং আল্লাহকে যথার্থভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে (১) তুমি তোমার মাথা ও যেগুলো সে জমা করে, তার হেফাজত করো। (২) তুমি তোমার পেট ও যেগুলো সে জমা করে, তার হেফাজত করো। (৩) আর তোমার বারবার স্মরণ করা উচিত মৃত্যুকে ও তার পরে পচে-গলে যাওয়াকে। (৪) আর যে ব্যক্তি আখিরাত কামনা করে, সে যেন পার্থিব বিলাসিতা পরিহার করে। যে ব্যক্তি উপরোক্ত কাজগুলো করে, সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে লজ্জা করে।’

(তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৮)

লজ্জাশীলতা শুধু একটি মানবিক বিষয়ই নয়। হাদিসের ভাষ্যে তা ঈমানের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা আছে; তন্মধ্যে সর্বাগ্রে হলো এই ঘোষণা—আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; আর সর্বনিম্নে হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জা হলো ঈমানের একটি শাখা।’

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫১)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের স্থান জান্নাত। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম। (তিরমিজি, হাদিস ২০০৯)

লজ্জা তিন প্রকার। নিজেকে লজ্জা, মানুষকে লজ্জা ও আল্লাহকে লজ্জা। লজ্জার সর্বোচ্চ স্তর হলো আল্লাহকে লজ্জা করা

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘হায়া’ অর্থ শরম, বৃষ্টি, তরতাজা ইত্যাদি, যা ‘হায়াত’ শব্দমূল থেকে উৎপন্ন। যার অর্থ হলো ‘জীবন’। এ জন্য বৃষ্টি ‌‘আল-গাইস’কে জীবন বলা হয়। কেননা বৃষ্টিপাতের মাধ্যমেই মৃত জমিন জীবিত হয় ও সেখানে ঘাস ও উদ্ভিদসমূহের জন্ম হয়। আর ‘হায়াত’ বললে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে বোঝানো হয়। অতএব যার ‘হায়া’ অর্থাৎ লজ্জা নেই, সে দুনিয়াতে মৃত এবং আখিরাতে হতভাগ্য ।…অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করার সময় তাকে লজ্জা করে, আখিরাতে সাক্ষাৎকালে আল্লাহ তাকে শাস্তিদানে লজ্জাবোধ করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতায় লজ্জাবোধ করে না, আল্লাহ তাকে শাস্তিদানে লজ্জাবোধ করবেন না। (ইবনুল কাইয়িম, আল-জাওয়াবুল কাফী লিমান সাআলা আনিদ দাওয়াইশ শাফি, পৃষ্ঠা ৬৯)

লজ্জাশীলতা এমন একটি মানবীয় উত্তম গুণ, যা মানুষকে দ্বিনের ওপর অটল ও অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে। পক্ষান্তরে লজ্জাহীনতা সৎ আমলের পরিবর্তে অসৎ কাজ করতে, দ্বিনের কাজের স্থলে অন্যান্য গর্হিত কাজ করতে বাধা দেয় না। কুররাহ ইবনু ইয়াস (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁর কাছে লজ্জাশীলতার কথা উল্লেখ করা হলো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! লজ্জাশীলতা হচ্ছে দ্বিনের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বরং সেটা (লাজুকতা) হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ দ্বিন’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights