স্থানীয়দের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ। এলাকায় চলছে শোকের মাতম। বিচার দাবি

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ ডাক্তার ছাড়াই বাচ্চা প্রসব করাকালে ১ ইি কাটতে গিয়ে প্রায় ৬ ইি কেটে ফেলেন নার্সেরা, ফলে রক্তনালির ভ্যান কেটে যায়। ক্লিনিক মালিক পল্লি চিকিৎসক মোবাইল ফোনে নার্সদের বাচ্চা খালাসের নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ , অবস্থা বেগতিক দেখে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ, এলাকায় চলছে শোকের মাতম, বিচার দাবি করেছে মৃতের পরিবার।

দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার ১০ মাইল মোড় এলাকায় অবস্থিত এস,এম, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কান্তজিউ মন্দির যেতে নদীর ব্রিজ পার হয়ে হাতের ডান সাইডে নদী পাড় এলাকা রাজশাহীয়া পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা মো. আবু তাহের এর স্ত্রী সোমা খাতুনকে গত ২৪/০৩/২০২৪ রবিবার আনুমানিক বিকেল ৫ টায় এস,এম, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন পরিবারবর্গরা, সুচিকিৎসা এবং বাচ্চা প্রসবের জন্য।

সন্ধেবেলা বাচ্চা প্রসবের সময় কোন ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় জনগণ ও মিডিয়া কর্মিদের সম্মুখে স্বীকার করেছেন ক্লিনিক এর মালিক পল্লি চিকিৎসক সাঈদুল হক। নার্স সাঈদা আক্তারকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নরমাল বাচ্চা খালাসের কৌশল বলে দেন, ডাক্তার ছাড়াই পল্লি চিকিৎসক সাঈদুল হকের পরামর্শে নার্স বাচ্চা খালাস করাকালীন ১ ইি কাটার কথা থাকলেও প্রায় ৬ ইি কেটে ফেলেন, এতে রক্ত নালির ভ্যান কেটে যায়, ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, এসময় প্রত্যক্ষদর্শী মৃতের স্বামী মো. আবু তাহের ও তার বোনসহ পরিবারের লোকজন (ওটি) রুমে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বলা হয় আপাদের ছেলে বাচ্চা হয়েছে, রোগী সুস্থ আছে চিন্তার কোন কারণ নেই,

কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পান (ওটি) রুমের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে, বারবার ইনজেকশন দিয়েই চলেছেন নার্স, রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আবারো ক্লিনিক মালিক সাঈদুল হককে, রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে, তিনি আবারো বলেন রোগী সুস্থ আছেন, কিছুই হয়নি, এভাবে প্রায় ২ ঘণ্টা কেটে যায়,এরপর ক্লিনিক মালিক আসেন, রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে,দরজা লাগিয়ে ভিতরে অবস্থান করেন,প্রায় আধ ঘণ্টা, এরপর ভিতর থেকে বাহির হয়ে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

ক্লিনিকের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের ফোন নম্বরও নেই ক্লিনিক মালিকের কাছে, নার্সদের কাছে ফোন নাম্বার নিয়ে ড্রাইভারের নিকট ফোন করা হলে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ড্রাইভার আসেন, রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে উঠাইলে দেখেন, ভেতরে কোন আলো নেই, ড্রাইভার বলেন, লাইটগুলো নষ্ট হয়েছে, মোবাইল ফোনের লাইট দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে আলো জ্বালিয়ে রোগীর দেখভাল করেন পরিবারের লোকেরা, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের চাকাতেও হওয়া কম ছিলো, ফলে হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগে, ততক্ষণেও রক্তক্ষরণ চলছেই।

এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেওয়ার পর রোগীকে কিছুতেই ভর্তি নিচ্ছিলেন না, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা, কর্তব্যরত ডাক্তারগণ পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন আপনাদের রোগী আধমরা হয়ে গেছে, আমরা ঝুঁকি নিতে পারব না, ডাক্তারদের অনেক অনুরোধ করার পর রোগী ভর্তি নিতে রাজি হন,হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের (ওটি) রুমে,রোগীর ক্ষত জায়গাগুলো সেলাই করেন,কর্তব্যরত ডাক্তার, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রাতেই মৃত্যু বরণ করেন সোমা খাতুন।

এমনিতেই অনেক কষ্টে মৃত্যু বরণ করেছেন এরপর থানা-পুলিশ করলে মৃত সোমা খাতুনকে কাটা-ছেঁড়া (পোস্টমর্টাম) করবে, সেই কারণে কথাও অভিযোগ করেননি পরিবারবর্গেরা, পরদিন ২৫/০৩/২০২৪ সোমবার সোমা খাতুনের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ক্লিনিক মালিক পল্লি চিকিৎসক সাঈদুল হক বলেন প্রেশার না পাওয়ায় রোগীকে রেফার্ড করা হয়েছে। ডাক্তার নেই নার্সদের দিয়ে বাচ্চা প্রসব কেন করালেন, প্রশ্নে জানান, নার্স দিয়ে নর্মালে বাচ্চা প্রসব করানো হয়েছে। বাচ্চা প্রসবের সময় কোন ডাক্তার তখন উপস্থিত ছিল না বলে স্থানীয় জনগণ ও মিডিয়া কর্র্মীদের সম্মুখে স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে, দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রোববার ৩১ মার্চ ২০২৪ নিহতের পরিবারের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে

দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা.এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী এ প্রতিনিধিকে জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights