এখনও লাঙল-গরুতেই সংসার চলে তার!

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে এক সময় লাঙল ও গরুর হাল ছাড়া কৃষি জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই চাষাবাদ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনো কোথাও কোথাও কালেভদ্রে লাঙল ও গরু দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য দেখা যায়।

কালের স্রোতের বিপরীতেই যেন হাঁটছেন দিনাজপুর সদরের উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল। এখনও তিনি টিকিয়ে রেখেছেন চাষাবাদের এই সনাতন প্রথা। প্রতি বিঘা জমি ২৫০-৩৫০ টাকা হারে নিজের দুটি গরুর হাল ও লাঙল দিয়েই চাষ করছেন কামাল।

মোস্তফা কামাল শোনালেন তার এই পেশায় আসার গল্প। তিনি বলেছেন, বংশানুক্রমিকভাবে ২০-২৫ বছর আগে থেকেই তিনি এই কাজের সাথে যুক্ত। প্রতি বছর চাষের মৌসুমে প্রতিদিন ১০০০-১২০০ টাকার মত আয় হয়। উপার্জিত এই অর্থ দিয়ে গরুর খাদ্য ও সংসার খরচ হয়। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রের কারণে গরুর হালের চাহিদা কমে গেছে। এতে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক জোড়া হালের বলদ কিনতে বর্তমানে ৪০-৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন। এছাড়া খৈল, ভূসিসহ বিভিন্ন খাবার যোগান দিতে হয় গরুকে। এরপরও রয়েছে অনেক গ্রামে গরু চোরের উপদ্রব। আছে বিভিন্ন রোগ বালাইও। এসব কারণে কৃষকরা যান্ত্রিক লাঙ্গলের প্রতি ঝুঁকছে। ধনী ও মধ্যবিত্ত কৃষকরা পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর কিনে জমি চাষাবাদ করছে। নিজের জমি চাষ করে অন্যের জমি বিঘা প্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে চাষ করছে। তাই ক্ষুদ্র কৃষকদের আর হালের বলদ কিনতে হয় না। ফলে উঠে যাচ্ছে এই লাঙল আর গরুর হাল।

বিরলের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, গরু-মহিষ, লাঙল ও জোয়াল ছিলো কৃষকের আশীর্বাদ স্বরূপ। গরু-মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল ছিলো আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশ বান্ধব কৃষি পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমান সময়ে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। ফলে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকরা বেশি আগ্রহী হচ্ছে তাই লাঙল-গরুর হাল চাষ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights