চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় রিমান্ডে ১২ আসামি
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম আদালতে পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের ঘটনায় কোতোয়ালী থানার দুই মামলায় গ্রেফতার ১২ আসামির ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার সকালে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
বুধবার সকালে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ১২ আসামি হলেন-জয় নাথ, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, সুমিত দাস, আমান দাস, বিশাল দাস, সনু মেথর, সুমন দাস, রাজেশ দাস, দুর্লভ দাস ও অজয় সূত্রধর চৌধুরী।
এর আগে, ২ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আটজন আসামির সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি রিয়াদ উদ্দীন বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১২ আসামির সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত আসামিদের উপস্থিতি শুনানি শেষে প্রত্যেকের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত একটি মামলায় ১০ জন আসামির ও আরেকটি মামলায় দু’জন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও এক মামলায় সাবেক কাউন্সিলরসহ ৭৯ আসামি
চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নগরের কোতোয়ালী থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন খুলশী থানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী।
মামলায় ২৯ জন আসামির নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন-সাবেক কাউন্সিলর জহুর লাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী, ইসকন নেতা প্রবীর চন্দ্র পাল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী শুভ কান্তি দাস এবং চট্টগ্রাম অ্যাডভোকেটস ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ২৬ নভেম্বর তার ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য তিনি একজন আইনজীবীর চেম্বারে যান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় দেখতে পান ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকন সমর্থকরা অস্ত্র-শস্ত্রসহ অবস্থান করছে। বাদীর মাথায় টুপি দেখে আসামিরা ‘শিবির ধর, শিবির ধর’ বলে মারধরের জন্য এগিয়ে আসে।
তখন তিনি ভয়ে দৌড়ে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে ঢুকলে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে অজ্ঞাত একজন লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। তখন আসামি বিজয় তার হাতে থাকা ছোরা দিয়ে জবাই করার হুমকি দেয়। পরে উপস্থিত জনতা এগিয়ে আসলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর তিনি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আইনজীবী নিহতের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম সিএমপির কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কারাগারে নিতে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে।
তাছাড়া, গত ১ ডিসেম্বর আইনজীবী আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা এবং আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন।