চাল নিয়ে প্রতারণা

আবদুর রহমান টুলু ও সাইফ ইমন

দেশজুড়ে চলছে চাল নিয়ে প্রতারণা। ছাঁটাইয়ে অপচয় করা হচ্ছে লাখ লাখ টন। নষ্ট হচ্ছে খাদ্যমান। ব্রি-২৮ হয়ে যাচ্ছে মিনিকেট। ব্রি-২৯ হচ্ছে নাজিরশাইল। মোটা ধান মেশিনে ছেঁটে চিকন করা চাল কিনে নিজেদের নামে বাজারজাত করছে বিভিন্ন প্রসিদ্ধ কোম্পানি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অটোরাইস মিলগুলোতে রয়েছে ডিজিটাল সেন্সর প্লান্ট। এর মাধ্যমে যে কোনো ধান বা চাল থেকে প্রথমে কালো, ময়লা ও পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর মোটা ধান চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে পাঁচটি ধাপ পার হয়ে চাল সাদা রং ধারণ করে। এরপর আসে পলিশিং মেশিনে। অতি সূক্ষ্ম এই মেশিনে মোটা চালের চারপাশ কেটে চিকন করা হয়। সেটি আবারও পলিশ ও স্টিম দিয়ে চকচকে শক্ত আকার দেওয়া হয়। সবশেষে এই চাল কথিত এবং আকর্ষণীয় মিনিকেট চালে পরিণত হয়। এসব কারণে মোটা চালের যত উৎপাদন হয় তার সবটা বাজারে পাওয়া যায় না। প্রতি বছর উৎপাদিত চালের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাজারে যাওয়ার আগেই অদৃশ্য হয়ে যায়। চিকন চালের দাম বেশি হওয়ায় এখন মোটা চালের দামও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিক পরিমাণে ঘষে ফেলার কারণে চালে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদন কমে যায়। থাকে শুধু কার্বোহাইড্রেটের অংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এরকম কোথাও কোথাও হচ্ছে, যা আমরা চিহ্নিত করেছি। নতুন খাদ্য পরিবহন ও ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত আইন হয়েছে। বিধিমালা তৈরি করতে একটু দেরি হয়েছে। তিন দিন আগে আমাদের হাতে বিধিমালা এসেছে। এটি শিগগিরই বন্ধ করা হবে।

জানা গেছে, মোটা চাল চিকন করার অন্যতম বাজার বগুড়ার সান্তাহারে। এ ছাড়া দুপচাঁচিয়া, শেরপুর শহরের শতাধিক অটো রাইস মিলে মোটা চাল কেটে-ছেঁটে নামিদামি জাতের ব্র্যান্ডিং তৈরি করা হয়। সান্তাহারেই প্রায় দেড় ডজন অটোরাইস মিল রয়েছে। শেরপুর উপজেলা শহরে ১৫টি বাছাই মিল রয়েছে। এসব অটোরাইস মিলে মিনিকেট, কাটারি, পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯, চিনিগুড়া, নাজিরশাইল চাল উৎপাদন করা হয়। মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামে ধানের কোনো জাত নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্রি-২৮ এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্রি-২৯ ধান কেটে মিনিকেট নামে বাজারজাত করা হয়। ব্রি-২৯ ধান অধিক ছাঁটাই ও পলিশ করে চালের নাম দেওয়া হয় নাজিরশাইল।

বুশরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সবুজ খান জানান, বুশরা অটোরাইস মিলে ধানের গুণগতমান যাচাই করে চাল উৎপাদন করা হয়। মোটা চাল ছেঁটে চিকন করার সুযোগ নেই। মোটা ধানের চাল মোটা আকারেই বিক্রি করা হয়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, বর্তমানে বগুড়ায় উৎপাদিত ধানের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই হাইব্রিড জাতের। বাজারে গেলে ব্রি-২৮, পাইজাম, নাজিরশাইল, মিনিকেটসহ আরও দু-একটি জাত ছাড়া অন্য ধানের চাল পাওয়া যায় না। অভিযোগ পেয়েছি ৮ থেকে ১০ প্রজাতির ধান একত্রে চাল করা হচ্ছে।

বগুড়া জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির জানান, মোটা চাল চিকন করার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights