ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংশোধনে ঢাবি ছাত্রদলের ২৭ প্রস্তাব

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংশোধনে প্রশাসনকে ২৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছে ঢাবি ছাত্রদল। এছাড়া উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।

আজ বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এসময় প্রস্তাবনাগুলো পাঠ করেন ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।

ছাত্রদলের প্রধান প্রস্তাবনাগুলো হলো-

১। ‌‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার ক্ষেত্রে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সীমা সুনির্দিষ্টভাবে ৩০ বছর না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব।

২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ও কার্যকরী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা এবং লালন করা।

৩। ডাকসুকে সর্বদা ঢাবি শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য ভূমিকা পালন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাগরিক অধিকার, আইনি সুরক্ষা, ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার যথাযথভাবে চর্চা করতে পারে এবং ভুয়া খবর ও গুজব প্রতিরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া, নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি, আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি এবং শৃঙ্খলা, নৈতিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীল মূল্যবোধ গঠনে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার, কাউন্সিলিং এবং অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৪। ঢাবি উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, সিন্ডিকেট, অ্যাল্যামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডাকসুর নির্বাচিত সহ-সভাপতিকে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন।

৫। ডাকসুর সভাপতি পদে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবে।

৬। নারী শিক্ষার্থীদের কার্যকরী অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য মোট দুইটি সহ-সভাপতি এবং দুটি সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আলাদা নির্বাচনের প্রস্তাব।

৭। ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক, জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভুক্তিবিষয়ক, গবেষণা ও উন্নয়নবিষয়ক ও কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধিবিষয়ক সম্পাদকসহ ৫টি নতুন সম্পাদক পদ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল।

৮। ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ পদটিতে উপাচার্যের এক শিক্ষক মনোনয়নের নিয়ম পরিবর্তন করে অর্থ সম্পাদক পদে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদান।

৯। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদকে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানবিষয়ক সম্পাদকে রূপান্তরকরণ।

১০। ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে ১৩টি পদ বর্ধিতকরণ ও প্রত্যেক সম্পাদকের সাথে ডেপুটি সম্পাদক নিয়োগ।

হল সংসদ নিয়ে প্রস্তাবনাগুলো হলো-

১। হল সংসদে সভাপতি পদে প্রাধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে সরাসরি সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রস্তাব।

২। কোষাধ্যক্ষ পদের পরিবর্তে নির্বাচিত অর্থ সম্পাদক প্রণয়নের প্রস্তাব।

৩। হল সংসদে প্রাধ্যক্ষ, দুইজন হাইজ টিউটর, অ্যালামনাই সোসাইটির সভাপতি ও হল সংসদের নির্বাচিত সভাপতিকে নিয়ে হল উপদেষ্টা পরিষদ গঠন।

এর আগে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় ছাত্রদল।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্র সংস্কারের এই প্রস্তাবনা কার্যকর করার জন্য ডাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্রের ১৬ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদনের বিধান রয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এই সিন্ডিকেটে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক দালাল ও পৃষ্ঠপোষক সদস্য হিসেবে বিদ্যমান রয়েছেন। এই নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত সদস্যদের প্ররোচনায় সিন্ডিকেট তার এক অনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে বিগত ১৭ জুলাই, ২০২৪ ইং তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা হলসমূহের ভেতরে অভিযান চালিয়ে জোরপূর্বক আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল খালি করে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে পরবর্তী দিনগুলোতে কারফিউ জারি থাকা অবস্থায় ঠিকানাবিহীন ও অনিরাপদ অবস্থায় বসবাস করেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। দেশব্যাপী নানান এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় আহতও হন তাদের অনেকে। এসব কারণে বর্তমান সিন্ডিকেটের অধীনে ডাকসু নির্বাচনসহ যেকোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ‘২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের অসীম আত্মত্যাগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবেগ ও চেতনার সম্পূর্ণরূপে পরিপন্থী।

এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু, নির্বিঘ্ন ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা ও সংকট বিদ্যমান রয়েছে তা দূরীকরণের জন্য সাময়িকভাবে ছাত্রদল কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। তা হলো:

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ সংশোধন করে নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদসমূহের নির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম, যেমন- সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিনেটে নির্বাচিত ছাত্র-প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব থাকার বিধানগুলো সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা।

২.ডাকসু ও হল সংসদসমূহের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের কমপক্ষে ৬০ (ষাট) দিন আগে বিদ্যমান সিন্ডিকেট প্রতিস্থাপন করে নিরপেক্ষ সদস্য সংবলিত একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সিন্ডিকেট’ তৈরি করা।

৩. ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ঘটে যাওয়া ঘটনার আলোকে, প্রতিটি ভোটারের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আবাসিক হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র তৈরি করা।

৪. ডাকসু ও হল সংসদসমূহের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের কমপক্ষে ৩০ (ত্রিশ) দিন আগে ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং চূড়ান্ত করা এবং এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ আপিল প্রক্রিয়া রাখা।

৫. ডাকসু ও হল সংসদসমূহের নির্বাহী কমিটির ইশতেহার, যোগাযোগ এবং নির্বাচনের সংবাদ প্রকাশের জন্য একটি নিবেদিতপ্রাণ ডাকসু ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, যাতে করে এ বিষয়ে গুজব কিংবা অপপ্রচার রোধ করা সহজ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights