নওগাঁয় কুমড়াবড়িতে স্বাবলম্বী নারীরা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ:

মাসকালাইয়ের ডাল ও চাল কমুড়া প্রধান উপাদান। এছাড়া কিছু মসলার সংমিশ্রনে তৈরি করা হয়। খাবারের আলাদা স্বাদ আনতে যার জুড়ি মেলা ভার। যেমন নাম তেমনি খেতে সুস্বাদু। এর নাম কুমড়াবড়ি।

শীতের শুরুতেই এই ঐতিহ্যবাহী খাদ্যটি তৈরীতে ধুম পড়েছে নওগাঁ জেলায়। আর এ মৌসুমে কুমড়াবড়ি তৈরী করে কিছুটা বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রায় ৩ হাজার নারী। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাসকলাইয়ের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লাভ কম। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষন ও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব গ্রামীন নারীরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন এবং গ্রামীন অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, কুমড়াবড়ি তৈরীর ধুম পড়েছে নওগাঁয়। এখানকার নারীদের ব্যস্ততা যেন একেঘিরেই। সারা বছরই কমবেশী কুমড়াবড়ি তৈরী হলেও শীত মৌসুমে এর চাহিদা বেশি। বাজারে চাহিদা এবং ভাল দাম থাকায় এলাকার অনেক পরিবারে ফিরিয়ে এনেছেন স্বচ্ছলতা। নওগাঁর রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলার প্রায় তিন হাজার গ্রামীন নারীরা কুমড়াবড়ি তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে আর্শ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ন এ তিন মাস তৈরি হয় কুমরাবড়ি। আর এ সুযোগে গ্রামীন নারীরা বাড়তি আয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ মৌসুম এখন বাড়ি বাড়ি চলছে সুস্বাদু খাবার কুমড়াবড়ি তৈরি। বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যাপকহারে পাওয়া যাচ্ছে এই সুস্বাদু কুমড়াবড়ি।

কুমরাবড়ির কারিগর বিজলি মোহন্ত জানায়, মাসকালাই প্রথমে রোদে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে ৩-৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। ১০ কেজি মাসকলাই থেকে আট কেজি ডাল পাওয়া যায়। এর সাথে ৪-৫ কেজি ওজনের কুমড়া এবং ২০ টাকার মসলা দিতে হয়। এরপর ভোররাত থেকে সেটি শিলপাটায় ডাল মিহি করে গুঁড়ো করা হয়। বর্তমানে অনেক এলাকায় মেশিনের সাহায্যে প্রতি কেজি ১০ টাকা করে মাসকলাই ও কুমড়া দিয়ে মিহি করা হয়। এরপর কুড়ে রাখা চাল কুমড়াসহ মসলা মিশিয়ে সকাল থেকে কুমড়াবড়ি তৈরী শুরু হয়। সকাল থেকে বেলা প্রায় ১০টা পর্যন্ত কুমড়া বড়ি তৈরীর কার্যক্রম চলে। কুমড়াবড়ি তৈরির পর ২-৩দিন একটানা রোদে শুকাতে হয়। সূর্যের আলো একটু কম হলে ৩-৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ৮ কেজি কাচাঁমাল শুকিয়ে প্রায় ৬ কেজি কুমড়াবড়ি পাওয়া যায়। শুকিয়ে খাবার উপযোগী হলে হাট-বাজারে খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করা হয়। নানা জাতের তরকারির সাথে কুমড়াবড়ি রান্না করলে খাবারে এনে দেয় ভিন্ন রকমের স্বাদ। এবার প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কুমরাবড়ির আরেক কারিগর শিল্পি রানী জানায়, বিশেষ করে গ্রামীন নারীরা বসে না থেকে সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়াবড়ি তৈরি করে। এখানে পুরুষদের কোন সহযোগীতা ছাড়াই শুধু নারীরা এ কাজ করে। আর এসব কুমড়াবড়ি বিশেষ করে জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও ঢাকাসহ কয়েকটি জেলার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। অল্প পুঁজিতে কিছুটা লাভ হওয়ায় কুমড়াবড়ির সাথে সম্পৃক্ত প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামীন নারীরা অর্থনীতিতে বেশ অবদান রেখেছেন। কুমরাবড়ির কারিগর প্রদিপ মোহন্ত জানায়, এবার মাসকলাইয়ের দাম অনেক বেশি। গত বছর ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা মন ছিল এবার ৬ হাজার টাকা পার হয়ে গেছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। তাই লাভের পরিমান কম হলেও ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, এ জেলায় বানিজ্যিকভাবে সুস্বাদু মাসকালাইয়ের কুমড়াবড়ি তৈরি হয়ে থাকে তা খুব সুস্বাদু। তবে তিনি কুমরাবড়ির কারিগরদের সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights