পলির আস্তরণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে আন্ধারমানিক নদী
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা আন্ধারমানিক নদীর পানির প্রবাহ। পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে দুই পাড়। বহু পয়েন্টে জেগে উঠেছে চর।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইলিশের অভয়াশ্রম নদীটি যেন জৌলুস হারাতে বসেছে। ভুগছে নাব্যতা সংকটে। জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনজনিত কারণ ছাড়াও এই নদীটির ওপর একের পর এক সেতু নির্মাণ, অবৈধ দখল ও প্লাস্টিক বর্জ্যের মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন অনেকেই। তবে নদীটি রক্ষায় এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মরা নদীতে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা।
জানা গেছে, প্রায় ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীটিতে শেখ কামাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতুগুলোর পিলার নদীর মধ্যে হওয়ায় স্রোতের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে পলি জমে দ্রুত নদীর তলদেশ সহ দু’পাড় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এরপর ফের একই নদীতে পায়রা বন্দরের আরও একটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।এছাড়া অবৈধ দখল ও দূষণের কবলে পরেছে এ নদীটি। ফলে আশঙ্কাজনক হারে পানির প্রবাহ কমে গেছে। বর্তমানে দোতলা লঞ্চসহ মালবোঝাই কার্গো চলাচল করছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। খরস্রোতা এ আন্ধারমানিক নদীটি দিনদিন যেন তার স্রোত ও গতি-প্রকৃতি হারাতে বসেছে। জেলেসহ সাধারণ মানুষ মূলত এই প্রতিবন্ধকতাকে ভরাটের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন।
দীর্ঘ বছর ধরে আন্দারমানিক নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন জেলে নুর হোসেন। তিনি বলেন, এই নদীটি সাগরে সঙ্গে মিশেছে। মোহনায় বালুর চর পড়ায় পানি প্রবাহের পথ অপ্রশস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া একের পর এক ব্রিজ নির্মাণের করানে স্রোতের গতি কমে গেছে। আগে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় না।
অপর এক জেলে আব্দুর রহিম বলেন, এক সময় এ নদীর স্রোতের গতিতে দুই পাড় ভাঙতো। এখন সেই ভাঙা অংশে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে কমে গেছে গভীরতা। জাল ফেললেও আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই সে মাছ ধরা বাদ দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কলাপাড়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আন্ধারমানিক নদীর মাত্র ৮-৯ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি সেতু ও নাব্যতা না থাকার কারণে পলির আস্তরণে ভরাট হয়ে গেছে নদীটি। সেইসঙ্গে নদীর দুই পাড় ঘিরে সমানতালে চলছে দখল দূষণ। করা হচ্ছে একের পর এক ইটভাটা। মোট কথা এখানে পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের একটা মাতম চলছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে নদীর দুই পাড়ের মানুষের বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই এখনই আন্ধারমানিক নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দখল দূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, আন্ধারমানিক নদীটি গুরুত্বপূর্ণ ইলিশের অভয়াশ্রম। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এ নদীর উপর দুইটি ব্রিজ করা হয়েছে এবং আরও একটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এর ফলে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নদীর নাব্যতা কমে গেছে। একইসঙ্গে ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে।