বরেন্দ্রে গচ্চা ৮০ কোটি টাকার পাতকুয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রান্তিক কৃষকের সেচ সুবিধার জন্য ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের নাম ‘জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প’। এর মাধ্যমে পাতকুয়া স্থাপন করে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার কথা ছিল। ওই বছরের অক্টোবরে শুরু হয় এর কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। বরেন্দ্র অঞ্চলের তিনটি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়।
প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলা, নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট, মহাদেবপুর ও পত্নীতলা উপজেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পবা উপজেলার সবকটি পাতকুয়া কৃষকের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। প্রতিটি পাতকুয়া থেকে দুজন কৃষকও সুবিধা পাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় পাতকুয়া নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ২০২১ সালের জুন মাসে কুয়া খননের কাজ শেষ হয়। কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই বেশির ভাগ পাতকুয়া কার্যকারিতা হারিয়েছে। কৃষকরা সুবিধা পাচ্ছেন না দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান জানান, পাতকুয়াগুলো এখন কোন অবস্থায় আছে, সেটি জানতে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখবে।
প্রকল্পে উল্লেখিত ২৪২ হেক্টর জমির সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের ফলে ১৪৫৭ হেক্টর জমি আবাদি করার কথা কাগজকলমে থাকলেও তা হয়নি। এসব জমি থেকে ৮ হাজার ১৩ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এর দেখা মেলেনি। নওগাঁর হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এটা থেকে আবাদ করার যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সেটা মোটেও পাই না। নষ্ট হওয়ার পর মেরামতের জন্য বললেও সেটা করে দেয় না।’ পবা উপজেলার চর মাজারদিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় নির্মিত একটি পাতকুয়ার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন আলম শেখ। তিনি বলেন, ‘এত টাকার জিনিসে মাত্র ৫ বিঘা জমিতে আবাদ হবে এটা যুক্তিযোগ্য না।’
এ অভিযোগ মানতে নারাজ প্রকল্প পরিচালক শিব্বির আহমেদ। তিনি দাবি করেন, প্রকল্পের কাজ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়েছে। এখনো সেগুলো ভালোভাবে চলছে। কিছু এলাকার নাম উল্লেখ করে সেসব পাতকুয়া নষ্টের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর গুলোর কথা বলতে পারব না। অন্যগুলো ঠিকই আছে। কৃষকরা সুবিধাও পাচ্ছে।’ পাতকুয়ার কার্যকারিতা ও পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে রিপোর্ট আছে। সবই ভালো চলছে।’