বাঁশফুল থেকে ভাত-পায়েস তৈরি!

দিনাজপুর প্রতিনিধি
বাঁশ ঝাড়ে পাওয়া যাচ্ছে ধানের বিকল্প বাঁশের বীজ। আর এই বাঁশের বীজ থেকে পাওয়া চালের মতো দানা, যা দিয়ে খাবারের চাহিদা পূরণ করছেন স্থানীয়রা। ধানের বিকল্প হিসেবে বাঁশফুলের বীজ থেকে সংগ্রহকৃত দানা খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এলাকায় সাড়া ফেলেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের কৃষক ছিমল রায়ের ছেলে যুবক সাঞ্জু রায় (২৫)। এখন তিনি এই দানা নিজের পরিবারের খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রি করে আয়ও করছেন।

বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। জানাজানি হলে এটি দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে। বাঁশ ঝাড়ের নিচে পড়ে থাকা ধানসদৃশ দানাদার শস্য হাতে নেড়ে দেখছেন কেউ কেউ। আবার কেউ মুখে দিয়ে পরখ করছেন।

সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে দেখা যায়, ছোট আকারের দুটি মাটির ঘর। স্ত্রী, দুই সন্তান, মা-বাবা নিয়ে সাঞ্জুর সংসার। বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। উঠানের এক পাশে সাঞ্জুর মা সাবিত্রী রায় সেগুলো পরিষ্কার করছেন। এরপর সেগুলো ধান ভাঙানোর হাসকিং মিলে নিয়ে ভাঙাছেন। বাড়ির উঠানে কয়েকটি বীজের বস্তা রেখেছেন। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন, গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রতিবেশী মিনতি রানী, সুনীল রায়সহ কয়েকজন জানান, বাঁশের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করার বিষয়টি প্রথমে আমরা পাত্তা দিইনি। তার এই দানা সংগ্রহ দেখে অবাক হই। পরে তার এই উৎপাদিত দানা অনেকেই কিনে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সাঞ্জু রায় বলেন, আমি দিনমজুরের কাজ করি। এক মাস আগে পাশের গ্রামে কাজ করতে যাই। সেখানে কাজের ফাঁকে কালীচন্দ্র রায় (৭০) নামে পরিচিত একজন আমাকে বাঁশের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করে খাওয়ার বিষয়টি জানান। এখন কাজ নেই। তাই তার কথা মতো আমি সেগুলো সংগ্রহ করে প্রথমে নিজে খাই। ভালো লাগায় এরপর থেকে তা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৭ মণ দানাদার শস্য সংগ্রহ করেছি। ইতোমধ্যে ২ মণ চাল পেয়েছি। এতে নিজেদের খাবারের চাহিদা পূরণ করেও এই চাল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বাড়তি আয়ও হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। ওই বাঁশ আর ধান একই পরিবারের হওয়ায় চাল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত সে বিষয় জানতে বাঁশের এই ধান বা চাল ল্যাবে পরীক্ষা করা উচিত। এটি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights