বিবাহবহির্ভূত ভালোবাসা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়
প্রেম-ভালোবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত। আল্লাহ যা মানুষকে দান করেছেন। তবে ইসলামে নারী-পুরুষের ভালোবাসা মানে বেলেল্লাপনা নয়। আল কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা, ‘আল্লাহর কুদরতের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ সুরা রুম, আয়াত ২১। একটা সময় ছিল যখন বিবাহবহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসা আমাদের পরিবারগুলোয় দারুণ অপছন্দনীয় ছিল। ধর্মীয় কারণে হারাম তো বটেই, আমাদের দেশি সংস্কৃতিতেও বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতো না। ক্রমেই আমরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে চলেছি। ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকলেও সংস্কৃতিটা বদলে যাচ্ছে। অনেক ধর্মীয় পরিবারের ছেলেমেয়েও এখন বিয়ের আগে নানা সম্পর্কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে। আগে এসব বিষয় মানুষ লুকিয়ে আড়ালে আবডালে করত। এখন প্রকাশ্যে প্রেম-প্রণয়ের খবর জানান দিচ্ছে ছেলেমেয়েরা। এমনকি সমাজমাধ্যমে প্রেমের কথা তো বলছেই, ছবি ও ঘোরাফেরার ভিডিও শেয়ার করছে। অবস্থা এতই নাজুক যে, এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেও সমর্থন পাওয়া যায় না।
১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ভ্যালেন্টাইনস বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিদেশি সংস্কৃতি অনুসরণ করে বাংলাদেশে তা পালিত হয়েছে। ২৭০ সালে রোমের সম্রাট ছিলেন কর্ডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু তরুণ-তরুণীদের পরিণয়মন্ত্রে দীক্ষা দিতেন। এ অপরাধে সাধু ভ্যালেন্টাইনের শির-েদ হয়। পরে ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নামকরণ। এ দিবস কেন্দ্র করে আমাদের সমাজেও অনেক অনৈতিক কার্যক্রম চলে। যেগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যারা মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা কামনা করে তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন দুনিয়া ও আখিরাতের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ সুরা নুর, আয়াত ১৯। ভালোবাসার নামে ইসলামবহির্ভূত কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিয়ের আগে তরুণ-তরুণীদের পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা-মেলামেশা, প্রেম-ভালোবাসা ইসলামে হারাম। কাউকে ভালোবাসতে হলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসতে হবে। এ প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য কারও সঙ্গে শত্রুতা রাখা।’ মুসনাদে আহমদ। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল সে ব্যক্তি নিজ ইমানকে পূর্ণতা দান করল।’ আবু দাউদ। ইসলামে বিধর্মীদের আনন্দ উৎসব অনুসরণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) খায়বার যাত্রাকালে মূর্তিপূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের কাছে যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর ওপর তির টানিয়ে রাখা হতো। এটা দেখে কিছু সাহাবি রসুলকে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। রসুল (সা.) ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সুবহানাল্লাহ! এ তো মুসা (আ.)-এর জাতির মতো কথা। আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর মতো। আমি নিশ্চিত আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার-অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে। মিশকাত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে সে ব্যক্তি সে জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে।’ আবু দাউদ। তাই ভালোবাসা দিবস পালনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। নারী-পুরুষের বিবাহবহির্ভূত যে ভালোবাসা গড়ে ওঠে শুধু আবেগ বা কুপ্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে সে ভালোবাসায় না থাকে ভালোবাসার স্নিগ্ধতা, না থাকে পবিত্রতা। না থাকে কোনো সুখ। স্থায়ীও হয় না। সে ভালোবাসা মানুষের ইহকাল-পরকাল উভয় জগৎ ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস করে মানুষের মনুষ্যত্ব। জাগ্রত করে মনের পশুত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগের অধিকাংশ ভালোবাসাই হচ্ছে এ ধরনের। ভালোবাসার নামে মানুষ লিপ্ত হচ্ছে নানান অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায়। ভালোবাসা ঘিরে উৎপত্তি হচ্ছে নানান অপসংস্কৃতি ও গর্হিত কর্মকান্ড; যার উদাহরণ ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ দিএক ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নামে উদ্যাপন করা হয়। ভালোবাসা দিবস এলেই একশ্রেণির যুবক-যুবতী প্রেমের জোয়ারে উন্মাতাল হয়ে ওঠে। নিজেদের রূপসৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। এমন কর্মকান্ড ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। কোরআনে আছে, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।’ সুরা নূর। ভালোবাসা হবে কেবল বিয়ের পরই। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এর মধ্যে অনেক সওয়াবও আছে, কল্যাণও আছে। ভালোবাসা দিবসের নামে ইমানবিধ্বংসী কার্যকলাপ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক