বিশ্বের সব স্বৈরশাসকের মধ্যে শেখ হাসিনা জঘন্যতম জুলুমবাজ : মাসুদ সাঈদী

অনলাইন ডেস্ক
পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেছেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের পথ কখনোই ফুল বিছানো ছিল না; বরং যুগে যুগে বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই ইসলামের সৈনিকরা দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জুলুম-নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। এসব উপেক্ষা করে সমাজে-রাষ্ট্রে ইসলামী বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই মানবতার প্রকৃত মুক্তি নিশ্চিত করা যাবে।’

‘আল্লাহ সরাসরি যে সকল মহামানবকে ইসলামের কাজের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন সে সকল নবী-রাসুলগণও ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে শত্রুদের জুলুম-নির্যাতনের নির্মম শিকার হয়েছেন। শতভাগ নিষ্পাপ ও নির্মোহ এ মানুষগুলোকেও দৈহিক নির্যাতন করা হয়েছে, সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। তাদের অনেককেই জানে মেরে ফেলা হয়েছে। ইসলামের জন্য নবীদের ত্যাগ ও কুরবানির অসংখ্যা দৃষ্টান্ত মহাগ্রন্থ কুরআনে রয়েছে। অতীতের সকল ইসলাম বিরোধীদের ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় জালিম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তার পূর্বসুরীদের পদাংক অনুসরণ করে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত দল ও তাদের নেতৃবৃন্দের উপর অত্যাচার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। জেল দিয়েছে, ফাঁসি দিয়েছে। কোরআনের পাখি বিশ্বনন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে খুনি হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানিবাড়ি চাঁদপুর পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ২৬তম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা মো. আব্দুল বাসিরের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক মাওলানা হামিদুজ্জমান ও ইসলমী ব্যাংক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় মাহফিলে তাফসীর পেশ করেন দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন যশোরের মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক অধ্যাপক মাওলানা তৈয়েবুর রহমান। মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমির শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা কেরামত আলী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘ইসলামে সব ধরনের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের উপর জুলুম করলেও তার জন্য একই হুকুম। কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা রায়, মিথ্যা সাজা, কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, শারিরীক কিংবা মানসিক ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ দখল ইত্যাদি সব কাজই জুলুম।’

মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘জুলুম কঠিন গুনাহের কাজ। মানবতার বিচারে জুলুম এতই অপছন্দনীয় যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্যও এটি হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একজন অন্যজনের ওপর জুলুম করো না।’

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জালিমকে ছাড় দেন। কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালিমকে তার জুলুমের শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। যারা জুলুম করে এমন কাউকে মহান আল্লাহ অতীতে ছেড়ে দেননি। তার শেকড় যতই শক্ত হোক। ফেরাউন ও নমরুদ তাদের শক্তির দাম্ভিকতায় নিজেদের রব বলে দাবি করেছিল। স্বীয় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এবং তার পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সব নবজাতক ছেলে সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা নিজেদেরকে সর্ব ক্ষমতার অধিকারী ভেবেছিল। ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। জুলুম করেছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।’

শেখ হাসিনাকে বাংলার নমরুদ উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের নমরুদ শেখ হাসিনাও একইভাবে তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য দেশের ছাত্র যুবক বৃদ্ধ সকলকে গণহারে হত্যা করেছে। শত সহস্র মানুষকে গুম করেছে। হাজারো মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করেছে দেশের অর্থনীতির ভীতকে ভেঙে দিয়েছে। ব্যাংকের টাকা বোন ছেলে মেয়ে মিলে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গুম খুন নির্যাতন বিশ্বের সব স্বৈরশাসককে হার মানিয়েছে। বিশ্বের সব স্বৈরশাসকের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জঘন্যতম জুলুমবাজ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুম-অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেই তাকে গুম করে আয়নাঘরে বন্দী করে রাখা হতো। হাসিনার মাফিয়া সরকার যে পরিমাণ অত্যাচার-নিপীড়ন করেছে তা এ দেশের মানুষ ভুলতে পারবে না। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের পলাতকদের অবিলম্বে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিতে হবে।’

মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা শাহ আলম, যাদবপুর দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা একরামুল হক, মাওলানা হাসান আল মামুন, মাওলানা ইয়াসিন আলী, হাফেজ মাওলানা আজকারুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights