ভোটে হারলে ট্রাম্প এবারো ফল পাল্টে দিতে হিংস্র হয়ে উঠবেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র
নির্বাচনের প্রচারণা এখন তুঙ্গে। কমালা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প চষে বেড়াচ্ছেন দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজেদের বিজয় সুসংহত করার অভিপ্রায়ে। পাশাপাশি ডেমক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির নীতি নির্ধারকরাও সভা-সমাবেশে মিলিত হয়ে আগাম ভোটের পাল্লা জোরদার করার চেষ্টা করছেন। এমনি অবস্থায় নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজ পরিচালিত জরিপেও ২০২০ সালের মতো নির্বাচনী ফল পাল্টে দেওয়ার মত স্বৈরাচারী আচরণের আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে।

রবিবার এই জরিপের রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারের ৪৭ শতাংশেরই বদ্ধমূল ধারণা যে, ভোটে পরাজিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারো ফল পাল্টে দিতে হিংস্র হয়ে উঠবেন। ২০ থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে চালানো এই জরিপে আরও উদ্বেগজনক তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, ৭৬ শতাংশর ধারণা, আমেরিকার গণতন্ত্র মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। চলমান গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থে জনসাধারণের উপকারে কাজ করে না বলে উল্লেখ করেছেন ৪৫ শতাংশ নাগরিক। ৬২ শতাংশ নাগরিক বলছেন, গণতান্ত্রিক লেবাসে নির্বাচিতরাও সরকার/প্রশাসন পরিচালনায় দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছেন। জনগণের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন এই শ্রেণির ভোটাররা।

বৈশ্বিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার রাজনীতি ও সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হচ্ছে না বলে মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। মৌলিক সুবিধাসমূহ প্রদানে মার্কিন সরকার ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেছেন ৬২ শতাংশ নাগরিক। ৫৮ শতাংশ বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। অন্যথায় প্রত্যাশিত উন্নতি-কল্যাণ সাধনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে।

দুই বছর আগে পরিচালিত একই ধরনের জরিপে ৭০ শতাংশ আমেরিকান উল্লেখ করেছিলেন যে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের জরিপে তেমন মানুষের আস্থার ভিত বেড়ে ৮০ শতাংশ হয়েছে।

এমন উদ্বেগের মধ্যে ২১ অক্টোবর পরিচালিত বিশ্বখ্যাত ‘নিউজ উইকে’র জরিপে আশার বাণী শুনিয়েছেন ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির অনেক ভোটার। আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের কাছে যদি ট্রাম্প হেরে যান, তাহলে ট্রাম্পের উচিত হবে তাৎক্ষণিকভাবে সেই ফল মেনে নেওয়া— এমন অভিমত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোটার।

এছাড়া, ৩৪ শতাংশ মনে করছেন যে, পরাজিত হলে ট্রাম্প ফল মেনে নেবেন না। ২১ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের আচরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না ট্রাম্প কী করবেন। কারণ, এখনো ট্রাম্প মেনে নেননি যে, ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি সত্যিকার অর্থেই পরাজিত হয়েছিলেন।

রেডফিল্ড এবং উইলটন স্ট্র্যাটেজি’র অন্য এক জরিপে ৫১ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে, নির্বাচনের ফল ট্রাম্পকে মেনে নেওয়া উচিত।

এদিকে, শনিবার মিশিগানে এক সমাবেশে সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা বলেন, ট্রাম্পের গর্ভপাতবিরোধী কট্টর মনোভাবে নারীর প্রতি তার বিদ্বেষী মনোভাবের বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে।

তাই প্রত্যেক পুরুষের প্রতি মিশেল আহ্বান জানিয়েছেন, তাদের মা, বোন, খালা, ভাগনির প্রতি সদয় থাকার জন্যে। এটি প্রত্যেক মানুষের মানবিক দায়িত্ব। এ সমাবেশে ছিলেন কমালা হ্যারিসও।

উল্লেখ্য, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের মধ্যে অন্যতম মিশিগানের মুসলমান ভোটাররা ইতোমধ্যে বাইডেনের উত্তরসূরি হিসেবে কমালাকে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্তে অনড় ভোটারের কিছু অংশ ইদানীং মত পাল্টে রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। এতে করে মিশিগানের বিজয় হাতছাড়া হয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামলা হ্যারিস এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঘনঘন নির্বাচনী সমাবেশ করছেন।

মিশেল ওবামা আরো বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় মানে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে আবারও আতঙ্কে নিপতিত হতে হবে। কারণ, ইতঃপূর্বে তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে, আফ্রিকান আমেরিকান, এমনকি ল্যাটিনোদের বিরুদ্ধেও নানা অমানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। অভিবাসীদের তিনি আবর্জনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই, ব্যালট যুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400

Verified by MonsterInsights