ময়লা-বর্জ্যের রাজধানী

হাসান ইমন
বিগত বছরগুলোতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা ক্লিন ঢাকা গড়ার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবে পরিণত করতে পারেননি তাদের কেউই। বিশেষ করে গত দুই দশকে দুই সিটির চার মেয়র কিছু পরিকল্পনা নিলেও মাঠে তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে রাজধানীতে এখনো যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। এজন্য বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহে তদারকির অভাব দায়ী বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

ঢাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। এ শহরে প্রতিদিনই বাড়ছে নাগরিকের সংখ্যা। দুই সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাপদন হয়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে উৎপাদন হয় ৩ হাজার ২০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য, আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। বিশাল এই বর্জ্য সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশন। যদিও বর্জ্য সংগ্রহে অর্ধেক জনবলই মাঠে থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহে কর্মীদের অবহেলা রয়েছে। দুই-তিন দিন বাসাবাড়ির বর্জ্য পড়ে থাকে। এর জন্য সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন নাগরিকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে বেগম রোকেয়া সরণি সড়কে সংসদ সচিবালয় কোয়ার্টারের সামনে সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এখানে বিশেষ করে বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হয়। এসব বর্জ্য পচে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই স্তূপের পাশ দিয়ে নাকমুখ চেপেও হেঁটে চলা দায়। একই অবস্থা দেখা গেছে মিরপুর-১০ নম্বরের সেনপাড়া সড়কেও। বিশাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ময়লার স্তূপের কারণে সড়কটি দিয়ে একটি রিকশা চালানো যেন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। রামপুরা মৌলভীরটেক এলাকায়ও দেখা গেছে একই চিত্র। সড়কেই ফেলা হয়েছে বাসাবাড়ির বর্জ্য। একই অবস্থা দয়াগঞ্জ, ইংলিশ রোড, পুরান ঢাকাসহ ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার অনেক স্থানে।

মিরপুর সেনাপাড়া সড়কে কথা হয় রিকশাচালক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে দীর্ঘদিন থেকে ময়লা ফেলছে ভ্যানচালকরা। আর আশপাশের দোকানিরাও এখানে ময়লা ফেলে। বিশেষ করে বাসাবাড়ির বর্র্জ্য পচে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। তবে ময়লাগুলো রাস্তার এক পাশ দখল করে থাকায় গাড়ি চলাচলে বেশি সমস্যা হয়। একই সময়ে দুটি গাড়ি চলতে পারে না।

বনশ্রী এইচ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের শাহ আলম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি তিন তলায় থাকি। প্রতিদিন বাসার বর্জ্য নিচে প্লাস্টিকের ড্রামে রেখে দিই। কিন্তু প্রতিদিন ময়লা নেয় না কর্মীরা। দুই তিন দিনের ময়লা জমলে তখন তারা নিয়ে যায়। এই দুই দিন ময়লা পচার দুর্গন্ধ হয়। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি না করার কারণে কর্মীরা অবহেলা করছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, রাজধানীর যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এর মধ্যে ৬০টি ওয়ার্ডে এসটিএস করতে সক্ষম হয়েছি। আর দুটি ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণের কাজ শেষ যা শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহে ওয়ার্ড বর্জ্য পরিদর্শকরা তদারকি করে। আমরা এই বিষয়টা খতিয়ে দেখব।

সাবেক মেয়রদের যত পরিকল্পনা : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক ক্লিন ঢাকা গড়তে রাস্তার পাশে মিনি ওয়েস্টবিন স্থাপনে পরিকল্পনা নেন। কিছু স্থাপন করলেও কিছুদিন পর তা উধাও হয়ে যায়। ভেস্তে যায় পরিকল্পনা। একই সঙ্গে সেকেন্ডারি ট্রান্সপার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপনেও উদ্যোগ নেয় এই দুই মেয়র। কিছু এসটিএস নির্মাণও করেন। পরের মেয়াদে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে ক্লিন সিটি করার ইশতেহারও দিয়েছিলেন। বাস্তবে রূপান্তর করতে পারেননি। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি ৫৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টি ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণ করেছে। আর বাকি ২২টি ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণ করার মতো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬৪টিতে এসটিএস নির্মাণ করেছে। বাকি ১১টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে উন্মুক্ত স্থান। সব মিলিয়ে দুই সিটির ৩৩ ওয়ার্ডে সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এসবের ফল উন্মুক্ত কনটেইনারে রাখা হচ্ছে বর্জ্য অথবা থাকছে যত্রতত্র পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights