যাত্রী খরায় ভাড়া কমলো ঢাকা-বরিশাল নৌ পথে, রোটেশন চালু

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অবশেষে চালু হচ্ছে রোটেশন প্রথা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর অব্যাহত লোকসানের মুখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিকরা। আগামীকাল শনিবার শুরু হবে নতুন পদ্ধতি। নতুন সূচি অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিদিন রাতে দুটি লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়বে এবং একইভাবে বরিশাল থেকে দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। যাত্রী আকর্ষণ করতে সরকার নির্ধারিত ভাড়াও কমিয়েছেন মালিকরা। লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নতুন সূচি লঞ্চ মালিকদের টিকে থাকার লড়াই।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর নৌ পথে যাত্রী খড়া দেখা দেয়। দুই ঈদসহ বিশেষ উৎসবে প্রত্যাশিত যাত্রী পেলেও বছরের অন্য সময় লোকসান দিতে দিতে ক্লান্ত লঞ্চ মালিকরা। অব্যাহত লোকসানের মুখে এই রুটের কীর্তনখোলা গ্রুপের দুটি, অ্যাডভেঞ্চার গ্রুপের ১টি, পারাবত কোম্পানীর ২টি, সুরভী গ্রুপের একটি, সুন্দরবন গ্রুপের ২টি এবং এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চ ইতিমধ্যে তাদের সার্ভিস বন্ধ রেখেছে। বাকী ১০টি লঞ্চ দুই প্রান্ত থেকে প্রতিদিন চলাচল করলেও যাত্রী সংকটে লোকসান কাটাতে পারছিল না তারা।

এ অবস্থায় লোকসান দিয়েও রুটে টিকে থাকা ৬টি নেভিগেশন কোম্পানীর মালিকরা গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সদরঘাটে এক সভা করেন। সভায় লোকসান কাটাতে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে রোটেশন প্রথা চালুর বিষয়ে ঐক্যমত হন মালিকরা।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হবে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের রোটেশন প্রথা। নতুন সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন রাতে ঢাকা থেকে ২টি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়বে এবং একইভাবে ২টি লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। সে হিসেবে প্রতি ৪ দিন পর একটি লঞ্চ রুটে যাত্রী বহনের সুযোগ পাবে।

নৌ পথে ফের যাত্রী আকর্ষণ করতে সরকার নির্ধারিত ৪০৯ টাকার ডেক যাত্রী ভাড়া ৩০০ টাকা, ১ হাজার ৭শ’ টাকার সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ টাকা এবং ৩ হাজার ৪শ’ টাকার ডবল কেবিন ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিষয়েও লঞ্চ মালিকরা ঐক্যমত হন।

পারাবত লঞ্চ কোম্পানীর সুপারভাইজার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের কয়েক দিন ছাড়া প্রতি ট্রিপে লোকসান আর লোকসান। এমনিতেই যাত্রী সল্পতা। তার উপর লঞ্চের সংখ্যা বেশী হওয়ায় কেউই প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পাচ্ছিল না। যাত্রীর খড়া থাকায় কোন লঞ্চে জ্বালানী তেলের খরচও উঠছিল না। এ অবস্থায় রোটেশন ছাড়া বরিশাল-ঢাকা নৌ সার্ভিস টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পরেছিলো। কিন্তু একটি লঞ্চ কোম্পানীর খামখেয়ালীর কারণে রোটেশন চালু করা যাচ্ছিল না। অবশেষে লঞ্চ মালিকরা ঐক্যমত হয়ে রোটেশনে সম্মত হয়েছেন। শনিবার থেকে রোটেশন শুরু হবে। এখন থেকে উভয়প্রান্ত থেকে ২টি করে লঞ্চ চলবে। ৪ দিন পর একটি ট্রিপ পেলেও লঞ্চ ব্যবসা কোনমতে টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সহ সভাপতি মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী স্বল্পতার কারণে কয়েকটি লঞ্চ তাদের সার্ভিস বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে যারা লোকসান দিয়েও রুটে টিকে আছে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন থেকে দুটি করে লঞ্চ চালাবেন। নতুন পদ্ধতিতে বরিশাল-ঢাকা রুটের সার্ভিস টিকে থাকতে পারে কিনা সেটা কয়েক দিনেই বোঝা যাবে। এতেও লোকসান হলে প্রতিদিন উভয়প্রান্ত থেকে একটি করে লঞ্চ চালাবেন মালিকরা। ভাড়া কমানোর বিষয়ে রিন্টু বলেন, সরকার নির্ধারিত ডেক এবং কেবিন ভাড়ায় যাত্রী পাওয়া যাবে না। এ কারণে যাত্রী আকর্ষণ করতে এখন থেকে ডেক ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ এবং ডবল কেবিন ২ হাজার টাকা করে আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights