রাজশাহীতে যুবলীগে গৃহদাহ সামাজিক মাধ্যমে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়ার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা জারির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই সভাপতি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। এরই জের ধরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সংগঠনের আগামী নেতৃত্বে অর্থের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে।

যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল রমজান আলীকে সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন বাচ্চুকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর যুবলীগের কমিটি করা হয়। এর এক যুগ পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চের সম্মেলনেও রমজান আলী ও বাচ্চু নিজ নিজ পদে পুননির্বাচিত হন। এই কমিটিই মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দায়িত্বে আছে। সম্প্রতি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি তাগাদা দিলেও তা হয়নি। এরপর সবশেষ পুরনো ওয়ার্ড কমিটি বহাল অবস্থাতেই নগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয় কেন্দ্র থেকে। এর শেষ দিন ছিল গত ২০ ফেব্রুয়ারি।

কেন্দ্রীয় যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭ জন তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে নগর যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসাবে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন তৌরিদ আল মাসুদ রনি। ১৯ ফেব্রুয়ারি জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত তার নেতাকর্মীরা তাকে নিশ্চিত সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে থাকেন। কিন্তু শেষ দিন ২০ ফেব্রুয়ারি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল মোমিনের পক্ষে সভাপতি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে পরিস্থিতি বদলে যায়। রনি ও মোমিনের সমর্থকরা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতে শুরু করেন।

সূত্র জানায়, প্রথম থেকেই রনির সমর্থকরা তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এই অবস্থায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আবদুল মোমিন খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সভাপতি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার অনুমতি চান।

সেখান থেকে বেরিয়ে মোমিন জীবনবৃত্তান্ত জমা না দিলে সামাজিক মাধ্যমে মোমিনের অনুসারীদের লিখতে দেখা যায়- ‘রাজনীতিতে ত্যাগের চেয়ে কি টাকার ভূমিকা বড়?’ সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা ফেসবুকে লিখেন: ‘একমাত্র সিভি নাকি একজন বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী বিপুল টাকায় কিনে নিয়েছে, যার রাজনীতি ৫ বছরের। সমগ্র মহানগরের ৯০ পার্সেন্ট জনসমর্থন যার আছে, তার জন্য সান্ত্বনা, তুই চুপ থাক। ৩০ বছরের স্বপ্ন এভাবে ভেঙে যাওয়া ন্যায়ের বার্তা?’ জবাবে সাজ্জাদুর রহমান সুজন নামে রনির আরেক সমর্থক লিখেন: ‘টাকা তো সব নেতারই আছে। কিন্তু খরচ করে কয়জন? খরচ করতে কলিজা লাগে। খালি খাবেন আর সিন্দুকে ভরে রাখবেন এমন নেতা আমরা চাই না।’

পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে শেষ দিন মোমিনের জীবনবৃত্তান্ত দাখিল করার সঙ্গে সঙ্গে তার নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে শুরু করলে। রনির সমর্থকরা ফেসবুকে মোমিনকে ইঙ্গিত করে লিখতে শুরু করেন যে, তিনি ‘নেতা’র আদেশ অমান্য করেছেন। রনির সমর্থক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দীপ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন: ‘নেতাকে মানি, কিন্তু নেতার সিদ্ধান্ত মানি না। হায় রে নেতার লোক। হায় রে রাজনীতি।’

রনির আরেক সমর্থক মানিক ফেসবুকে মোমিনের উদ্দেশে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন: ‘রাজনীতি করবেন। নেতার কমান্ড মানবেন না। এটা হতে পারে না।’

জবাবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মির্জা জনি স্ট্যাটাস দেন: ‘যাদের অতীত খুঁজলে এখনও পেটে বিএনপির টাকা পাওয়া যাবে, ফেসবুকে তাদের দালালি দেখে মনে হবে রাজনীতিতে তাদের না জানি কতোই অবদান।’

এই পরিস্থিতিতে তৌরিদ আল মাসুদ রনির সমর্থক মীর মিঠু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোমিনের উদ্দেশে লিখেন: ‘১২ বছর একটি সংগঠনের সভাপতি পদে থেকে (মহানগর ছাত্রলীগ) ১২টা ওয়ার্ডের কমিটি করতে পারেনি। এখন আবার আরেকটি সংগঠনের ১২টা বাজানোর মিশনে নেমেছেন। মনে রাখবেন এটি যুবলীগ। কোনো সাফা কিরকিরা সংগঠন নয়।’

মীর মিঠুর ওই পোস্টের নিচেই সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ জানান। এরপর মোমিনের সমর্থকরা ফেসবুকে আরও লিখতে শুরু করেন রনিকে ইঙ্গিত করে। রাজন ইসলাম নামের মোমিনের একজন সমর্থক রনির উদ্দেশে লিখেন: ‘টাকার বাহাদুরী বেশিদিন চলবে না। টাকা বাদে কর্মী সমর্থক দেখান। তাহলে বুঝবো আপনি নেতা হওয়ার যোগ্য।’

মানিক রাজশাহী আইডি থেকে একজন লিখেন: ‘রাজশাহী মহানগর যুবলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চায়, ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করা হোক। যে কোনো দিন যুবলীগ করেনি, সেই ধরনের কোনো নেতাকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চায় না ৩৭ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা।’ স্বপন রেজা নামের একজন রনিকে ইঙ্গিত করে স্ট্যাটাস দেন: ‘দুদিনের বৈরাগী ভাতে রে বলে অন্ন।’

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল মোমিন বলেন, ‘আমি জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছি। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। ফেসবুকে কে কি লিখছে, আমি জানি না।’

তৌরিদ আল মাসুদ রনিও দাবি করেন, ফেসবুকে এসব পোস্ট নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights