রূপগঞ্জে শীতবস্ত্র বিতরণের আগমুহূর্তে দুর্বৃত্তদের নারকীয় তাণ্ডব
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদে শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের আগমুহূর্তে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা পরিষদের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। একটি গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা।
একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারকে পরিষদের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে। দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সদ্য গজিয়ে ওঠা রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিকের ভাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এই নারকীয় হামলা ও তাণ্ডব ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করেন দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার ও তার অনুসারীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে কম্বল বিতরণের আয়োজন করেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার। একই সময় দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের গেটের সামনে স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থিত স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জমায়েত হতে থাকে। এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
দুপুর দেড়টার দিকে আন্ডা রফিক ও গাজীর লোকজন লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারের ব্যবহৃত হ্যারিয়ার গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে পুরো গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ তার লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। হামলাকারীরা মাঠের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। পরিষদের কক্ষে ঢুকেও ভাঙচুর তাণ্ডব চালায় তারা। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনাও ঘটে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান।
হামলার সময় রূপগঞ্জ থানার ওসি ও পুলিশ সুপারের সহায়তা চাওয়া হলেও তাদের সাড়া মেলেনি। পরে সহকারী পুলিশ সুপার পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারকে উদ্ধার করেন। এছাড়া পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাড়ির আগুন নেভান। ততক্ষণে অবশ্য গাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ বিষয়ে দাউদপুর পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে এখানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে চেয়ার টেবিল দেওয়া হয়। কোনো কিছু বোঝার আগেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গেট ভেঙে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে এবং গাড়ি ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। চেয়ার-টেবিলও ভাঙচুর করে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক সাহা বলেন, সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়ন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এবং তদন্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।