সরকারি ভাতা দেওয়ার নামে ৪ বছর ধরে প্রতারণা, অতঃপর শ্রীঘরে
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার নাম করে কারো কাছ থেকে ৫০০ টাকা, আবার কারো থেকে নিয়েছে ছয় হাজার টাকা। এভাবে প্রায় চার বছর ধরে প্রতারণা করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটা প্রতারক চক্র। অবশেষে ওই চক্রের মূলহোতাসহ দুইজনকে ধরে পিটুনি দিয়ে প্রশাসনের কাছে সোপার্দ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
পরে বিকেল ৪টার দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে প্রতারক আনিসুর রহমানকে ১৫ দিন এবং মূলহোতা শেখ বিল্লাল হোসেনকে (৪৫) এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এরপর তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত।
প্রতারক চক্রের মূলহোতার নাম বিল্লাল হোসেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলা ও থানার নলকুড়া এলাকার মৃত নুর উদ্দীন শেখের ছেলে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী এই ব্যক্তি একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী। তার সহযোগী আনিসুর রহমান (৩৫) একই এলাকার আব্দুল গাজীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন চা বিক্রেতা।
জোতমোড়া গ্রামের ভুক্তভোগী পলাশ শেখ বলেন, প্রতারক বিল্লাল হোসেন মাস দুয়েক আগে বাড়িতে এসেছিল। সেদিন আমার বাবাকে বয়স্ক ভাতা দেবে বলে একটি ভুয়া আবেদন ফরম পূরণ করে ছয় হাজার টাকা নিয়ে যায়। বুধবার দুপুরে ফের বাড়িতে এলে তাদের হাতেনাতে ধরে প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
একই গ্রামের হোসেন আলী বলেন, সকালে আমার বাবার বয়স্ক ভাতার কথা বলে ৫০০ টাকা নিয়েছে। পরে জানলাম তারা প্রতারক। আটকের পর দুই প্রতারককে মারধর করেছে স্থানীয়রা।
এই দুই প্রতারকের আটকের খবর শুনে কুষ্টিয়া মিলপাড়া এলাকা থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন বেসরকারি চাকুরিজীবী এনামুল হক। তিনি বলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম না। ভুলভাল বুঝিয়ে মাস খানেক আগে আমার ছেলের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে তারা। প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন ভাতার কথা বলে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন চক্রের মূলহোতা বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, প্রায় চার বছর ধরে কুষ্টিয়া শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতারণা করছেন তিনি। তার দলে তিনজন সদস্য রয়েছেন। প্রতিদিন প্রতারণা করে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা আয় করেন তিনি।
তার সহযোগী আনিসুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় আমার চায়ের দোকান আছে। তবে, প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে বিল্লালের গাড়িচালক হিসেবে এখন চাকরি করছি।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, প্রায়ই প্রতারকরা বিভিন্ন ভাতার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যেত। আজ হাতেনাতে দুইজনকে ধরে প্রশাসনের কাছে সোপার্দ করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে ১৫ দিন এবং আরেকজন এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।