কৌশলে নবজাতক চুরি, নানা-নানী আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে তিনদিন বয়সী এক নবজাতক চুরির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার বিকালে হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে চুরির এ ঘটনা ঘটে।
নবজাতকের স্বজনরা বলছেন, বাচ্চা তার নানির কোলে ছিল। এসময় অপরিচিত এক নারী নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে হাসপাতালের বাইরে নগরীর বাটার মোড়ে এক আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে কৌশলে নবজাতককে চুরি করা হয়।
নবজাতকের বাবার নাম সুমন মিয়া। তার বাড়ি রংপুরের পীরগাছা থানার তাম্বুলপুর গ্রামে। সুমনের স্ত্রীর নাম মোছা. মনি খাতুন। তার বাবার বাড়ি ঈশ্বরদীর গোকুলনগর গ্রামে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মোছা. মনি খাতুন নামের এক নারী গত ৭ তারিখে পুত্র সন্তান জন্ম দেন। এর তিনদিন পর বাচ্চা হারানোর এমন অভিযোগ পেলে জানতে পারি নবজাতককে জোর করে বা ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি। নবজাতকের নানি নিজেই অপরিচিত এক নারীর কাছে দিয়েছেন। তাদের থেকে যদি নবজাতক নিয়ে যায় তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে এ ঘটনা জানার পর থেকে আমরা নিজেরাও খতিয়ে দেখছি এবং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছি। সব সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে এবং পুলিশের সহযোগিতায় খুব দ্রুত একটা সমাধানে আসতে পারবো বলে আশা করি ।’
সন্তান চুরির এ ঘটনার একদিন পর নগরীর রাজপাড়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সুমন আলী। তিনি বলেন, ‘গত সোমবার আমার স্ত্রী সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। বুধবার বিকালে আমার শাশুড়ি বাচ্চা কোলে নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় বোরকা পরিহিত অপরিচিত এক নারী নিজেকে স্বেচ্ছাসেবী দাবি করে বাচ্চা অসুস্থ এবং ভালো চিকিৎসার কথা বলে শহরের এক হোটেলের রুমে নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যান।’
বাটার মোড়ের ওই হোটেলের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৪.২৩ মিনিটে বোরকা পরিহিত দুজন নারী হোটেলে প্রবেশ করছেন। এরপর মুখে মাস্ক পরিহিত ওই নারী হোটেলে রুম বুকিং দিলে তার পাশেই নবজাতককে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তার নানিকে। পরে সেখান থেকে হোটেল বয় তাদের রুম দেখিয়ে দিলে ৪.৪০ মিনিটে রুম থেকে মাস্ক পরিহিত নারীকে বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় ।
এদিকে, গতকাল রাতে নবজাতকের নানা হাসান আলী ও নানি রুমি বেগম রাজপাড়া থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করতে যান। পরে তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাদের আটক রাখে।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা এমন সংবাদ পাওয়া মাত্রই তদন্ত শুরু করেছি। আশাকরি তাড়াতাড়ি সন্ধান পাওয়া যাবে। নবজাতকের নানা-নানিকে আটক রাখা হয়েছে। তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক। ওই নারীর কাছ থেকে কিছু টাকাও নিয়েছেন নবজাতকের নানি। সব মিলিয়ে শিশুর বাবা এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’