গাজীপুরে কলেজছাত্রী খুনের ঘটনায় গ্রেফতার ১

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর:

গাজীপুরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কুপিয়ে এক কলেজছাত্রীকে খুন এবং তার মা ও ছোট বোনকে আহত করার ঘটনায় পলাতক গৃহশিক্ষক এক মসজিদের ইমামকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তাকে বৃহস্পতিবার ভোররাতে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর এলাকায় বন্ধুর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব-১’র স্পেলাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর এএসএম মাঈদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃতের নাম-সাইদুল ইসলাম (২৫)। সে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানা এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।
র‌্যাব-১’র কোম্পানী কমান্ডার মেজর এএসএম মাঈদুল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদর থানাধীন দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফ তার স্ত্রী চার মেয়ে রাবেয়া আক্তার (২১), হাবিবা (১৮), খাদিজা (১৫), জান্নাত (১৩) ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তার ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করে। সে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি কলেজের ¯œাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য স্থানীয় টেকিবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম সাইদুল ইসলামকে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন আব্দুর রউফ। আরবী পড়ানোর জন্য বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তারের দিকে কু-নজর পড়ে মসজিদের ইমাম সাইদুল ইসলামের। ৫/৬ মাস পর রাবেয়া আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সাইদুল ইসলাম। রাবেয়ার পরিবার সরাসরি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাকে বাসায় এসে পড়ানোর জন্য নিষেধ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়াকে নানাভাবে উত্যাক্ত করতে থাকে সাইদুল ইসলাম। বিভিন্ন সময়ে উত্যক্ত করায় সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন রাবেয়ার পরিবার। এতে কিছুদিন উত্যাক্ত করা থেকে বিরত থাকে সাইদুল।

তিনি জানান, সম্প্রতি রাবেয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর পাশাপাশি রাবেয়া স্থানীয় তেলিপাড়া এলাকায় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি নেয়। রাবেয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতির খবর জানতে পেরে পুনঃরায় বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে সাইদুল। এতে রাবেয়ার পরিবার রাজী না হওয়ায় তাকে বাসার বাইরে আসা যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতে ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে সাইদুল। রাবেয়া বিষয়টি তার বাবা-মা’কে জানালে তারা সাইদুলকে উত্ত্যক্ত করতে পুনরায় নিষেধ করে। এ ঘটনায় আরও বেশি ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে এবং রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাইদুল।

হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সাইদুল স্থানীয় বাজারে এক কামারের দোকান থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করে। ওই ছুরি নিয়ে সোমবার ( ৮মে) রাত সাড়ে সাতটার দিকে রাবেয়া আক্তারের বাড়িতে যায় সাইদুল। সে রাবেয়ার কক্ষে ঢুকেই তার মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এসময় আহত রাবেয়ার ডাক-চিৎকারে তার মা বিলকিস বেগম (৪০) ও খাদিজাসহ দুই ছোট বোন দৌড়ে রাবেয়ার কক্ষে গিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় সাইদুল। পরে আহতদের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত রাবেয়া আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত নিহতের মা ও দুই ছোট বোনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

এ ব্যাপারে নিহতের পিতা বাদী হয়ে সাইদুল ইসলামকে আসামি করে মঙ্গলবার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাবেয়াকে মৌখিকভাবে প্রতারণামূলক বিয়ে করে সাইদুল। পরবর্তীতে বিয়ের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে সে। সাইদুলের অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় রাবেয়ার পরিবার। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়াকে নানাভাবে উত্যাক্ত করতে থাকে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাইদুল। সে চট্রগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাশ করার পর গাজীপুরের ওই মসজিদে ইমামতি করার পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতো এবং বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াত। ঘটনার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য সে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাঁপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করেছিল।

বৃহস্পতিবার ভোররাতে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা তাকে ওই বাসা থেকে গ্রেফতার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights