নতুন বছরে মুমিনের ভাবনা
মো. আবু তালহা তারীফ
নতুন বছর শুরু, জীবন থেকে একটি বছর বিয়োগ। বিয়োগ হয়েছে কারও নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী এমনকি নিজ পরিবারের সদস্যও। পৃথিবীর মায়া ছেড়েছে মা কিংবা বাবা। নতুন বছরে কত পরিচিত মুখ আজ দেখি না। কবরস্থানে গিয়ে দেখা মেলে তাদের কবর, কবরগুলো ভেঙে গেছে, অনেকের কবরের চিহ্নই নেই। গত বছরে এ দিনে তারা ছিল, আজ নেই। ভবিষ্যতে আমি থাকব কি? কবরবাসীর তালিকায় আমার নাম রয়েছে কি? সাদা কাপড় পরিধান করে কবরে প্রথম রাত কীভাবে কাটাব? মাটির এ ঘরে কেউ কি সঙ্গী হবে? অন্ধকার এ কবরে কীভাবে থাকব? নতুন বর্ষবরণে আনন্দ-উল্লাসে মেতে আছি, যাদের সঙ্গে এ রঙ্গলীলায় আড্ডাবাজিতে সময় নষ্ট করছি, অন্যকে ঠকিয়ে হারাম অর্জন করে কোটি টাকা আয় যাদের জন্য করেছি, তারা কি কেউ যাবে? এক কথার উত্তর ‘না’। আমি জানি না, কখন যেন কবরবাসীর তালিকায় আমার এ সুন্দর নামটি যুক্ত হয়। আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, হে আল্লাহ আমাদের নেক হায়াত দান করুন। মুমিন হিসেবে কবরে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। বুখারি শরিফে উল্লেখ রয়েছে, ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকালবেলার অপেক্ষার আশা করো না। সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যাবেলার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নাও এবং জীবিতাবস্থায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত গ্রহণ করো।’
নতুন বছরে বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে সময়কে কাজে লাগাবে একজন সফল মুমিন। বিদায়ি বছরের অসমাপ্ত কাজ পর্যালোচনা করে সঠিক নিয়মে জীবনকে সাজাবে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, নিজের অধীন কর্মচারী, বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ, সামাজিকভাবে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনসহ প্রত্যেকের হক আদায় করে নতুন বছরে আমল গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে নতুন বছরে তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজের অভ্যাস করবে। সকাল-সন্ধ্যা কোরআন পাঠ করলে নতুন বছরে অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত শুরু করা, অর্থসহ তেলাওয়াত করলে প্রত্যহ একটি করে আয়াত মুখস্থ করা, দান-সদকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, হালাল উপার্জন করা, সোনার মদিনায় হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করা, এক কথায় বিদায়ি বছরের তুলনায় নতুন বছরে সব ধরনের আমল বৃদ্ধির রুটিন করে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনকে নতুনত্ব দিয়ে সাজাবে। একজন মুমিন পাপকাজ করবে না অন্যকেও করতে দেবে না। পরিবারের মেয়েদের পর্দায় রাখবে। আমরা যারা ভাইরালের নেশায় কয়েকটি টাকার আশায় নিজ স্ত্রী বা মেয়েদের ভিডিও করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছি অভিভাবক হিসেবে জঘন্য এ কাজের কারণে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। পরিবারে সদস্যদের ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষার মাধ্যমেই সুখী পরিবার করা খুব সহজেই সম্ভব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ তোমরা নিজেদের এবং পরিবারের লোকদের আগুন থেকে বাচাও।’ তাহরিম, আয়াত : ০৬।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক