নায়িকা বনশ্রী থাকেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে
বেলাল রিজভী,মাদারীপুর
চিত্রনায়িকা বনশ্রী নব্বইয়ের দশকে ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে সোহরাব রুস্তম চলচিত্রের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমাতে অভিষেক ঘটে তার। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মহা ভূমিকম্প’। এই সিনেমায় দুই নায়ক মান্না ও আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন বনশ্রী। সে সময় আরও অনেক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্যি, এক সময়ের এই পর্দা কাঁপানো সেই নায়িকা এখন বাস করেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরের চর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকেন বনশ্রী।
সবাই তাকে বনশ্রী নামে চিনলেও তার পুরো নাম সাহিনা সিকদার। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। বাবা মজনু শিকদার ওরফে মজিবুর রহমান শিকদার ও মাতা সবুরজানের (রিনা) দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রীই বড়। বাবা ঠিকাদারি করার কারণে সাত বছর বয়সেই শিবচর থেকে পাড়ি জমান ঢাকাতে। ইটপাথরের নগরীতে এসে নাম লেখান সিনেমায়, জনপ্রিয়তাও পান। তবে সুখের সময়টা খুব বেশিদিনের ছিল না। একটা সময় সিনেমা থেকে সরে যান। এরপর দারিদ্র্যের কবলে পড়ে বাস করেন এক বস্তিতে।
চিত্রনায়িকা বনশ্রী জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি সংস্কৃতিচর্চার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। একসময় যুক্ত হন উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। তিনি ভালো গান করতেন। অভিনয় শেখার জন্য যোগ দেন সুবচন নাট্য সংসদে। নিয়মিত আবৃত্তি করেছেন বিটিভির স্পন্দন অনুষ্ঠানে। পরে সিনেমায় যুক্ত হন। তিনি কাজ করেছেন প্রায় দশটি সিনেমায়। যদিও তার মধ্যে তিনটি ছবি আলোর মুখ দেখে। একসময় ঝামেলায় পড়ে বাদ দিতে হয়েছে সিনেমা জগৎ। চিত্রজগৎ ছেড়ে দেয়ার পর আর্থিক অনটনের কারণে কিছুদিন ঢাকার শাহবাগের ফুল মার্কেটে ফুলের ব্যবসা করেছেন। বিভিন্ন বাসে করেছেন হকারি, বিক্রি করেছেন নামাজ শিক্ষার বইও।
তীব্র অভাব অনটনের মধ্যে জীবনের ঘানি টানতে না পেরে করোনা মহামারির পরে চলে আসেন নিজ উপজেলা শিবচরে। বর্তমানে বসবাস করছেন শিবচর উপজেলার মাদবরের চর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৯ নম্বর ঘরে।
তিনি আরও জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে। বড় মেয়েটি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল। এরপর মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন।
তিনি দাবি করেন, তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মালিক তাকে মডেল বানিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফেরত দেয়নি। মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য থানা পুলিশের আশ্রয় নিয়েও ফেরত পাননি। তিনি বলেন, মেয়েটির বিষয় আমি প্রশাসনের কোনো সাহায্য পাইনি। আমার মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে এখন কিছুই জানি না।
এ চিত্রনায়িকা আরও বলেন, এখন কষ্ট করেই দিন যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক মিটিংয়ে যাই। ছেলেটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, ওকে সময় দেই। আমি ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করি। তবে করোনা আসার পর আর সেলাইয়ের কাজও পাই না।
তার দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ায় শেখ হাসিনার সরকার। বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন ২০ লাখ টাকা। এতেও অভাব ঘোচেনি তার। স্থায়ী ঘর না থাকায় স্বস্তিতে ছিলেন না। সবশেষে ঠাঁই হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ২য় পর্যায় এর আওতায় শিবচর উপজেলার প্রত্যেকটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় বনশ্রী ঘর পেয়েছে।