২০০ বছরের চাল বাজার

সাইদ মেমন, বরিশাল

জৌলুস হারিয়ে কোনোমতে টিকে আছে বরিশালের বানারীপাড়ার ভাসমান চালের বাজার। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে সন্ধ্যা নদীর বানারীপাড়া লঞ্চঘাট এলাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বসে এ বাজার। হাটের ক্রেতা মো. কাওসার বলেন, ২০০ বছর ধরে এই হাট মেলে। রাইস মিল হওয়ার কারণে এখন আর আগের মতো ক্রেতা ও বিক্রেতা আসে না। তিনি বলেন, কুটিয়ালরা নৌকায় করে চাল নিয়ে আসে। ভাসমান অবস্থায় বিক্রি করে নদীর অপর তীরের ভাসমান বাজার থেকে ধান কিনে নেয়। পরে ওই ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে চাল করে বিক্রি করে। এ বাজারের সঙ্গে তীরের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বাজারে আনা চাল সম্পূর্ণ হাতে তৈরি। ধান রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়। তাই এ চাল পুষ্টিকর। মিলের তৈরি চাল ইরি ধানের। ওই চালে স্বাদ ও পুষ্টি নেই। এখানে ওঠা চাল আমন ধানের। এ চালের স্বাদ বেশি। উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বাজারের প্রবীণ চাল ব্যবসায়ী মো. মোদাচ্ছের বলেন, প্রতি ১৫ দিন পরপর এখান থেকে চাল কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। ভাসমান বাজার থেকে আমন মোটা প্রতি মণ ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে কেনেন। বিক্রি করেন প্রতি মণ ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এ ছাড়াও ভাসমান বাজারে বাঁশফুল বালাম বিক্রি হয় প্রতি মণ ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে ৩ হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রি করেন তিনি।

৩৫ বছর ধরে ভাসমান বাজারে নৌকায় করে চাল বিক্রি করা ফারুক হোসেন বলেন, প্রথমে তিনি ধান কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে বাড়িতে নিয়ে সিদ্ধ করেন। তিন থেকে পাঁচ দিন রোদে শুকিয়ে মিলে নিয়ে চাল করে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। এ কাজে স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে সহায়তা করেন। প্রবীণ মজিবর ঢালী বলেন, আগে সপ্তাহে চার দিন শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধবার হাট মিলত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার এসে চাল কিনত। এখন শুধু আশপাশের এলাকা থেকে পাইকার আসে। আগের মতো ক্রেতা না পেয়ে বিক্রেতাও কমে গেছে। তাই সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। প্রতি হাটে ৫ থেকে ৬ হাজার মণ চাল বিক্রি হয়। যারা চাল কেনে তারা মণ প্রতি ১০ টাকা করে খাজনা দেয়। প্রতি হাটবার সকাল ৭টার মধ্যে চাল নিয়ে বাজারে আসে বিক্রেতারা।

দুপুর ১২টার মধ্যে বেচাবিক্রি শেষ করে চলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights